প্রসঙ্গ বই মেলা-“ ই-বুক না ছাপা বই” -লিখছেন নিজামুদ্দিন সেখ


            প্রসঙ্গ বই মেলা-“ ই-বুক না ছাপা বই”  
                        নিজামুদ্দিন সেখ

            
চিত্র - বহরমপুর বইমেলা


  নিঃসঙ্গ জীবন মত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর , ভয়ঙ্কর এই জীবনের একমাত্র আশার দীপ শিখা জ্বালিয়ে বিরাজ করে যা তা পুস্তক,প্রেমহীন মানব জীবনে্র  দায়বদ্ধ প্রেমিক যদি কেউ থেকে থাকে তা হল বই যা কখনও প্রতারণা করে না।তাই বই প্রেমী মানুষ এর নিকট সকল উতসব তুচ্ছ ,বই মেলার কাছে। কিন্তু সময় বড়ো জিজ্ঞাসু ,সীমাহীন আগ্রহ তার, চলে আপনার খেয়ালে, তোয়াক্কা করে না কারও,চলার পথে এসে যায় কিছু প্রশ্ন,কিছু ইতিহাস , সমালোচকের এর কাছে কিছু বিতর্কের উপাদান। তেমনি একটি বিতর্কিত না নিছক বিষয় জানি না তবে ,মাথার ভিতর ঘুরপাক খায় বর্তমানে অতি দ্রুত গতিতে ছুটে চলা যুগের চাহিদায় কিছু নামহীন প্রশ্নরা , আজকের বই মেলা-“ ই-বুক না ছাপা বই”।এই বিষয় টা বই প্রেমিক এর কাছে মর্ম বিদারী,কিন্তু এই প্রশ্ন আজ এসে গেছে বই পাড়ায়, আজ ক্রেতার পবিত্র চরণ কিছু টা হলেও কমছে বলে অনেকের অভিমত।



            নানা রঙের, নানা স্বাদের বই নিয়ে সেজে উঠে বই মেলা।বই শোভা পাই টেবিলে,সচেতন পাঠকের আত্মার আত্মা, হৃদয়ের খুরাক,কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে কি বই পড়া আর বই কেনার ঐতিহ্য।প্রযুক্তির উন্নতি চরম সিমায়,চাইলে হাতের মুঠোই নিমেষে পেতে পারে পাঠ যোগ্য কিছু উপদান ,কিছু বই । বিভিন্ন সাইটের কৃপায় সার্চ করলেই পাই হাজার হাজার ই-বুক,তাতে হয়ত ক্ষনিকের চাহিদা চোখের পলকে মিটে যায়,কিন্তু বই প্রেমী মানুষের রস তৃষ্ণা মেটেনা।ছাপা বই হাতে চোখের সামনে যেন ভেসে আসে বইয়ের পাতায় লেখা প্রতিটি অক্ষর ছবি হয়ে,পৌচ্ছে দেয় বোধের চরম সীমায়।বইয়ের প্রতিটি শব্দ কে যেন হৃদয় দিয়ে ছোঁয়া যায় ,শুধু কী তাই বউ এর অভাব বই এ পূরণ করা যায় বলে অনেক সাহসী যুবক –পাঠক কিংবা লেখক  মত প্রকাশ করেন ।
     
              বছর বছর বই মেলা হয়,কোলকাতায় কলিকাতা পুস্তকমেলা বা Calcutta Book Fair) পশ্চিমবঙ্গের  রাজধানী কলকাতায় আয়োজিত একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক বইমেলা। এই মেলাটি কলকাতা ইবইমেলা নামেই সমধিক পরিচিত। ১৯৭৬ সালে প্রবর্তিত এই বইমেলা ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক বইমেলার স্বীকৃতি অর্জন করে। শুধু তিলোত্তমা তেই নয়,ছোট-বড়ো নানা জায়গায় গ্রামের নানা প্রান্তে বই মেলা হয়, মুর্শিদাবাদের বহরমপুর বইমেলা সেখানে এক পড়ন্ত বিকালে উপস্থিত হয়েছিলাম ,কিছু বইয়ের আশায়,শুরু থেকেই নাক সিটকে এই স্টল তো ও স্টল বই কেনার অনিচ্ছা টাই বেশী কাজ করছিল, পৌচ্ছে গিয়েছিলাম মুর্শিদাবাদ সংক্রান্ত স্টলে এক জন ভদ্রলোক আমার দিকে আগ্রহী মন নিয়ে তাকিয়ে ছিল হঠাত একটি বই নিয়ে বলল এই বইটি একবার দেখুন শুধু সুচি পত্রটা—আমি কেমন যেন দেখার ভান করে ,চটজলদি ছোট্ট করে বললাম “১৫০০ ই বুক বাকী আছে......”  একটু সরে আসতেই পাশের বন্ধু বলল তুমি কি চেন উনাকে , “না তো” উনিই বইটার লেখক, তখনই মনের ভিতর কেমন যেন করতে লাগল ,নিজেকে কেমন যেন “শিল্প সৃষ্টির” অবমাননাকারী মনে হতে লাগল । লজ্জাই উনার কাছে ফিরে গিয়ে বই কেনার মত হল না ।শুধু মাত্র ই- বুক পড়ার নেশায় এমন মনোভাব?। তবু অস্বীকার করার কোন উপায় নাই বই মেলা ঘিরে যে উদ্দীপনা থাকা উচিত ছিল তা সামান্য কম হলেও শেষ হয়নি, সেই দিন গুলিতে লেখক-প্রকাশক -পাঠক এক ই সরল রেখায় মাটির কাছাকাছি –নিছিদ্র সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ থাকে,বই মেলা প্রাঙ্গণে । এটাই তো চরম-পরম প্রাপ্তি বই মেলার।
স্টলে স্টলে ভীড় বইয়ের আনাকোন্ডা চলাফেরা¡  কবিতার পাতিলেবুর খাঁটি রসের থেকে অরেঞ্জ ফ্রুটির ভূতের
আর ফ্যান্টাসির গল্প অনেক দামী¡প্যাঁচে প্যাঁচে কবিতা প্যাকেট খুলে মুখে দিতে কষ্ট
সোজা রহমানির বিরিয়ানির টাটকা কল্পনা গেলো আর ঢেকুর তোলো
বিক্রেতা খুশী হয়ে পাবলিশার্স কে মিষ্টি
খাওয়ায় !লেখকের হাতের বুড়ো আঙ্গুলটাও বড় হয়ে যায় লেখার জনপ্রিয়তার
গ্যাসবেলুনের চাপে”...।(অন্তজাল)
  হ্যা্ ,লেখকের বুড়ো আঙ্গুল টা বড়ো নাহলেও -ই-বুকের দাপটে প্রকাশক এর আঙ্গুল ্যে ছোট নাই সেটা বলা ্বাহুল্য ,বিতর্ক একটু লঘু মস্তিস্কে রেখে গুরু মস্তিস্ক চাপ দিয়ে ই-বুকের সুবিধাটা একবার স্মরণ করা যেতেই পারে, কি বলেন?অল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা যায় ,সামান্যই খরচ, বিশ্বের দরবারে চোখের পলকে পৌঁছে দেওয়া যায়।লেখক নিজেই প্রকাশক হতে পারেন ।অনেক সময় লেখা প্রকাশ করতে গেলে সামনে-পিছনে কিছু চাই স্টীকার,সেই বিষয় টিকেও এড়ানো যেতেই পারে,গত শতকের ১৯৩০ সালে বব ব্রাউন ই বুক রিডারের যে ধারণা দেন ,তাই ই আজ বাস্তব, আর এক কল্প বিজ্ঞানী আইজ্যাক আসিমভ এক লেখায় বলেছেন “এক বিংশ শতকের মধ্য ভাগে কাগজের বই থাকবে না, প্রকাশনা চলে আসবে ইলেকট্রিক ডিভাইসে।বর্তমানে সংবাদ সকালে যা প্রাতরাশ বা কফির মগ এর সঙ্গে থাকত,যা তা ট্যাব ও মোবাইল হাতে পরিণত হয়েছে এই পেপারে।পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ই বুক কে স্বাগত জানিয়েছেন-কাগজের উপর চাপ কমবে,পত্রিকা সহ নানা ধরনের মুদ্রনের জন্য প্রতিদিন সাত কোটি টনের  মন্ডের প্রয়োজন হয়, এজন্য বনভুমি উজার করে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার হেক্টর।এই পরিমাণ বনভুমি তৈরিতে সময় লাগে প্রায় ২৫ বছর ,ই-বুক অনেক বনভুমি রক্ষা করেছে।ফলে ই-বু্কের কদর অনেকটা অগ্রগতির দিকে।  
   
          কিন্তু ও  বই থেকে যে ভবনা আসে সেই ভাবনা  মাউস হাতে তা আসে কি? মোটের উপর বিতর্কের সবে সূচনা হয়েছে যা চলবে-কিন্তু আরও বিচার্য শখের পাঠকের সংখ্য, তার কি অবস্থা ,শীতের উষ্ণ দুপুরে ঘুম ঘুম চোখে মা ঠাকূমা  বই নিয়ে বসতেন ,বাড়ীর বাচ্চারা পাশে বসে কান পেতে শুনত গল্প, আজ আর এমন দৃশ্য অতীত কথা।শুধু গল্পের পাতায়,তার বলেই চুপ কেন? সচেতন মানুষ, উপহার হিসেবে কেন ট্যাবে এর পরিবর্তে আসেনি মনমুগ্ধ কারি ছাপা বই।কোথাও আবার থিমের বাহারে বই মেলার সাজ বইয়ের চেয়ে ফোকাসে আসে বেশী।কিছু মেলার আবার খোলার সময় ,সাধারণ “অসাধারণ” দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে ওপেন করা হয়,ঘোষণা করা হয় গত কাল খুলে দেওয়া হবে সাধারনের জন্যবই মেলা। যদি শুধু বই প্রেমীর বা শুধু পাঠকের হয় ,তাহলে এত বিভেদ কেন?  কী এমন দৃশ্য চোখে কি পড়ে না?শুধু ই-বুক কেন দোষী,  দোষী “আমি” ও “সে” তবে বই মেলা বা সর্বত্র ই-বুকের পাশওয়াড ভিত্তিক ব্যাবহার করে,লেখকসত্ত্বার যোগ্য মর্যাদা দিয়ে বিতর্কিত বিষয় গুলো সাবধানে সরিয়ে রাখা যাবে বলে ভাবি প্রজম্মের দৃঢ় বিশ্বাস। লেখা আরও আসবে শুধু হৃদয়ের টানে ,পাঠকও যাবে আত্মার খোঁজে।
                              

Post a Comment

0 Comments